নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে অনুষ্ঠিত শাহাব উদ্দিন এমপি প্রাইজমানি ক্রিকেট লীগে ২০২০-২১ এর মেগা ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে, কোয়াব জুড়ীর পরিচালনায় অংশগ্রহনকারী ৩৫টি দলের ৮৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০-২১ সিজনের ফাইনালে উন্নীত হয় শাহজালাল স্পোর্টিং ক্লাব ও জুড়ী উপজেলা ফাউন্ডেশন। পুরো সিজনের সবচেয়ে কাঙ্খিত এই ফাইনাল ম্যাচটি হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে বেশ জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ন হয়। মাঠে বসে খেলা উপভোগ এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন জুড়ী বড়লেখা আসনের বারবারের নির্বাচিত এমপি বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন আহমেদ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান রুহুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে উক্ত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বিশেষ অতিথির আসন মঞ্চায়িত করেন জুড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল হোসেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক, কুলাউড়া সার্কেলের এএসপি সাদেক কাওসার দস্তগীর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক রিংকু রঞ্জন দাশ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রঞ্জিতা শর্মা, জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী, জেসিএর সাবেক আহবায়ক মাহবুবুল ইসলাম কাজল, আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল কাদির দারা, জুবের হাসান, ইমরুল ইসলাম, আফজাল হোসেন চিকন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মামুনুর রশীদ সাজু, সহ সভাপতি আহমদ কামাল অহিদ, হাসান তারেক, সম্পাদক শেখরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মতিন, তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারী কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এমএ মুজিব মাহবুব, কোয়াব সভাপতি আব্দুল আউয়াল, সহ সভাপতি সোহাদ আল আজাদ, মিনহাজ চৌধুরী, শাহীন চৌধুরী সহ কোয়াব নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়া অনুরাগী বিশিষ্টজন, প্রবাসী, রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন টীমের অফিসিয়াল, সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, গনমাধ্যকর্মী এবং দর্শকশ্রোতাবৃন্দ। প্রধান অতিথি মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি টুর্নামেন্টের সফল আয়োজক জুড়ী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও কোয়াবের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং জুড়ীতে একটি মিনি স্টেডিয়াম করে দেয়ার আশ্বাস দেন।
রবিবার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ সকালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শাহজালাল স্পোর্টিং ক্লাব। শুরুতে ১৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শাহজালাল। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন আজকের খেলার প্রধান আকর্ষণ জাতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক মমিনুল হক। ধিরস্থির স্টার্ট করার পর সংগ্রামী একটি ইনিংস খেলে দলকে খেলায় টিকিয়ে রাখেন তিনি। মাত্র ৪৮ বলে ১০টি চার ও ৬টি ছয় মেরে ৮৪ রানের দারুন একটি ইনিংস খেলেন মমিনুল। ততক্ষণে বড়সড় স্কোর হয়ে গেছে শাহজালালের। টপ অর্ডারে জুয়েল এর ২৩, মিডল অর্ডারে আমির হোসেন রনির ৩০ ও ফিনিশিংয়ে মাত্র ১৩ বলে ফারদিন বাবেলের ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে ২৫ ওভারে শাহজালাল স্পোর্টিং ক্লাবের টোটাল সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩৬ রান। জুড়ী উপজেলা ফাউন্ডেশনের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন আলামিন, অতিথি খেলোয়ার শাহরিয়ার সুমন ও অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। শাহজালালের আরেক অতিথি খেলোয়ার বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৯ জাতীয় দলের বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়ার রুবেল মিয়া ব্যাটিংয়ে এসে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফিরে যান। বোলার ছিলেন ফারুক আহমেদ। আবার সেই ফারুক শেষ ওভার করতে এসে তিনটি চার ও দুই ছয়সহ দেন ২৬ রান। ব্যাটসম্যান ছিলেন ফারদিন বাবেল। খেলা পরিচালনা করেন অতিথি আম্পায়ার জাহিদ জামান তামি ও লোকাল আম্পায়ার কোয়াব জুড়ীর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন তামিম।
খেলার দ্বিতীয়ার্ধে ২৩৭ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে একইরকম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে জুড়ী উপজেলা ফাউন্ডেশন। কিন্তু চার নম্বরে অতিথি খেলোয়ার তৌফিক খান তুষার এসেই বদলে দেন খেলার দৃশ্যপট। সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বিদ্ধংসী এই ব্যাটসম্যান কয়েকটি বল মোকাবেলা করে হঠাৎ চড়াও হন স্পিডস্টার রুবেল মিয়ার ওপর। অসাধারণ সব শট খেলে ওই ওভারে সংগ্রহ করেন ২৪ রান। এরপর আরও চড়াও হয়ে খেলা শুরু করলে দ্রুত দলের রান বাড়তে থাকে। কিন্তু কাটার স্পেশালিস্ট রাসেল আসার পর তার একটি বল চার্জ করতে গিয়ে লং অফে জুয়েলের হাতে ধরা পড়েন তুষার। ২৪ বলে ৪৬ রানে তুষার আউট হলে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের সাথে শাহজালাল সমর্থকরা বলা যায় হাফ ছেড় বাঁচেন। তারপর আবার ব্যাটিং বিপর্যয়ের স্বীকার জুড়ী ফাউন্ডেশন। আস্তেআস্তে দর্শকের ভাটা পড়তে থাকে মাঠের চারপাশে। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা ছিলো ভিন্ন। আট নম্বর উইকেট জুটিতে দলীয় অধিনায়ক ফারুকের সাথে ৮৮ রানের দারুন এক পার্টনারশীপ গড়েন সিনিয়র ক্রিকেটার জাকির হোসেন শান্ত। শেষ তিন ওভারে জুড়ী উপজেলা ফাউন্ডেশনের প্রয়োজন যখন ৫৬ রান তখন কয়েক বলের ব্যবধানে শান্ত ৪৯ ও ফারুক ব্যাক্তিগত ৪০ রানে আউট হলে জয়ের সপ্ন থেকে ছিটকে পড়ে ফাউন্ডেশন। ৩৯ রান বাকী থাকতে অলআউট করে ফাইনাল নিজের করে নেয় শাহজালাল স্পোর্টিং ক্লাব। ব্যাটে বলে কোনো বিভাগেই জ্বলে উঠতে পারেন নি ফাউন্ডেশনের আরেক অতিথি খেলোয়ার শাহরিয়ার সুমন। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন মমিনুল হক। সর্বোচ্চ রান করে টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি জেতেন শাহজালালের জুয়েল আহমেদ। এ নিয়ে টানা পাঁচ বার আন্ত উপজেলা চ্যাম্পিয়ান হয় শাহজালাল। আর টানা তৃতীয়বার রানার্সআপ হলো জুড়ী উপজেলা ফাউন্ডেশন।
মেহেদী হাসান / হাকালুকি নেটওয়ার্ক
Sharing is caring!